রহিম সাহেবের গল্প- দুর্ভিক্ষ।

avatar

pexels-adil-ahnaf🇧🇩-9904303.jpg


রহিম সাহেব, গ্রামের বাড়ি রসুলপুর পোড়াবাড়ি, পেশাই ক্ষুদ্র ব্যাবসাহী। মানুষটাকে দেখলে মনে হয় অনেক ব্যাস্ত, সব সময় এদিক অদিক ছোটাছুটি করতেই থাকে। চিকন ছিনছিন পুরো গ্রাম দাপিয়ে বেরায়, মাজে মধ্যে তাকে খুঁজেই পাওয়া যেত না। বাড়িতে স্ত্রী সন্তানসহ আছে বৃদ্ধ মা। সন্তানদের মধ্যে বড় ছেলে ক্লাস টেনে, ছোট ছেলে ক্লাস ফাইভে আর ছোট মেয়েটা নার্সারিতে পড়ে। এইতো দিনকাল খুব ভালই যাচ্ছিল রহিম সাহেবের।

সে ব্যবসায়ী তো বটেই কিন্তু অত্যন্ত বিচক্ষণ একজন লোক, গ্রামের লোকজন প্রায়ই পরামর্শ করে, এজন্য মানুষজন তাকে সম্মানও করে। সে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দুখু মিয়ার চায়ের দোকানে যায়, এক কাপ দুধ চা হাতে শুরু হয় তার গল্পের ছরি, সবাই অবাক হয়ে তার গল্প শোনে, তার গল্পের ঝুড়িতে আছে হরেক রকম গল্প, ছোট গল্প থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়িয়ে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য কোনকিছুই বাদ যায়না।

আজ সে বলছিল, বাংলার মানুষের কষ্টের কথা, এ দেশ আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূবে কেমন ছিল, ১৯৭১ এ সাধীনতা লাভের পর থেকে এ দেশ ও দেশের মানুষজন অনেকগুলো বিপযয়ের সম্মুখীন হয়, এর মধ্যে প্রথমেই আছে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ, দেশ সাধীন হওয়ার পর দেশে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেই, মানুষজন তখন খুবই কষ্টে জীবনযাপন করছিল, ভাত কাপরের অভাব যে কি জিনিস তা তখনকার মানুষজন ভালভাবেই টের পেয়েছিল। তখন না ছিল কোন মান সম্মত সমাজ ব্যবস্থা, না কোন অর্থনৈতিক কাঠামো। মানুষজন অনাহার আর অপুষ্টিতে পিষ্ট হচ্ছিল। লাখ লাখ মানুষ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছিল, তাদের জীবন যে কি দুর্বিষহ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। সে সময় চাল ও লবণের দাম এমন বেড়ে মানুষের নাগালের বাহিরে চলে গিয়েছিল।

১৯৭০ সালেও দুর্ভিক্ষ হয়েছিল যা আমরা ছিয়াত্তরের মনান্তর নামে জানি, এ সময় প্রায় সারে ৩ কোটি মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। এ দুর্ভিক্ষে শুধু বাংলাদেশ নয় সমগ্র ভারত উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল। মানুষ তখন প্রকৃতির এক ভয়ংকর রুপ দেখতে পেয়েছিল। মানুষজন কাজ আর দু-মুঠো খেয়ে বেচে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করত। এছাড়া বিংশ শতাব্দীতেও দুর্ভিক্ষ হানাদেই যার দরুন লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি মানুষ প্রাণ হারায়, এখানেই শেষ নই আপনারা হয়ত চিনের মহাদুর্ভিক্ষের কথা জানেন না, ১৯৫৮-১৯৬১ সনের দুর্ভিক্ষে প্রায় ৩০ কোটি লোক মৃত্যুবরন করে শুধু চিনেই। জানি কথাগুলো খুব একটা আমাদের মনে দাগ কাটছে না, কাটার কথাও না কারন আমরা সে সময়ের অবস্থাটা ঠিকমত উপলব্ধি করতে পারছিনা। কিন্তু আমরা এটা হয়তো সবাই জানি না খেয়ে থাকলে আমাদের মন কি রকম অস্থির হয়ে পরে, জীবনকে যতটা না কাছ থেকে দেখি তার থেকে উপলব্ধি করাটা জরুরি। শুধু তাই নয় আজ জীবনের মান হয়ত অনেক উন্নত, অনেক কিছু বদলে গেছে, কিন্তু মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো এখনও একইরকম, চাল, ডাল, কাপড়, মাথা গোজার জন্য ঠাই।

এসব দুর্ভিক্ষের কারনগুলো যদি বিশ্লেষন করি, তাহলে দেখা যাবে সবথেকে বড় কারন যুদ্ধ। দেশের অর্থনীতিক কাঠামো ভেঙে যাওয়ার প্রধান কারনও এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এ সময় পরিমান মানুষ মারা গিয়েছে আমরা সবাই জানি। এরপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়, সরকারের গঠনতন্ত্রের নীতিগত ব্যর্থতা। রহিম সাহেব হঠাৎ থেমে গেল কি যেন মনে পরে গেল, চায়ের বিলটা দিয়ে সে দ্রত হেঁটে চলে গেল।
…………….



0
0
0.000
1 comments
avatar

রহিম সাহেবের মত মানুষেরাই বুঝে কিভাবে কিসের মূল্য দিতে হয়, কারন তারা জানে প্রকৃত সুখ কোথায় ।

0
0
0.000